জগলুল হুদাঃ এক সময়ে চা শ্রমিকদের জীবন মান কষ্টকর ছিল। স্বল্প বেতনে পরিবার চালাতে হিমসিম খেতে হতো। শ্রমিক পল্লীকে লেগে থাকতো অভাব অনটন। ছেলেময়েদের লেখাপড়া করানো তাদের স্বপ্ন ছিল। দুবেলা জুটতোনা ভাল খাবার। তাদের জীবনযাত্রা পল্লীর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। মাদকের করাল গ্রাসে চা পল্লীর পরিবেশ ছিল দু:সহ। আধুনিকতা ছোঁয়া ছিলনা। বিলাস জীবন যাপন ছিল অকল্পনীয়। বসবাস উপযোগী ঘর, মোবাইল ফোন, টিভি, বিদ্যুৎ, বিনোদন , খেলাধুলার কোনো চিন্তা ও করতে পারতনা এ পল্লীর বাসিন্দারা। এখন সেই দিন আর নেই। পুরো পাল্টে গেছে এলাকার পরিবেশ এ যেন একটি মিনি বাংলাদেশ। ঘুরে দাড়িয়েছে রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগানের সহস্রাধিক শ্রমিক। বদলে গেছে শ্রমিকদের জীবন মান। চা শ্রমিক পল্লীতে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বস্ত্র, বাসস্থানেও নতুনত্ব এসেছে। পাল্টে গেছে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মান। সুখের নাগাল পেয়েছে কোদালা চা বাগানের শ্রমিকরা। উন্নত খাবার জুটে পল্লীর ঘরে ঘরে। আধুনিক পোশাকের পাশাপাশি বাসস্থানে নতুনত্বের ছোঁয়া, শিক্ষার হারও বেড়েছে চা পল্লীতে। বেড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্র্যাক স্কুলের পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। উন্নত শিক্ষায় অধ্যয়ন করছে এ গ্রামের অনেকেই। ৪ শয্যাবিশিষ্ট পল্লীর এ হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার পাশাপাশি ফ্রি ওষুধও দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে কোদালা চা শ্রমিক পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, পল্লীর টিনের কাঁচা ঘরের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের পাকা ঘর। ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান হচ্ছে হিন্দু মন্দির। পুরো পল্লীতে ৪২৯টি টিনের ঘর নির্মান হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে ১১৭টি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। নির্মান হয়েছে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা। ম্যালেরিয়া রোগ শূণ্যের কোটায়। শিশুদের জন্য ১৪ টি ডে কেয়ার সেন্টার খোলা হয়েছে।
কোদালা চা বাগান অফিস সূত্র জানায়, ৯৩৬ শ্রমিক এ বাগানে দুই হাজিরায় ১৭০ টাকা বেতন পায়। একেক পরিবারে ৫ থেকে ৬ জন বাগানে কাজ করে। রেশন হিসেবে প্রতি সপ্তাহে দুই টাকা করে মাথাপিছু ৪ কেজি চাউল পায়। একটি সূত্র জানায়, দেশের অন্যান্য চা বাগানে একজন শ্রমিক ৮ ঘন্টা কাজ করে ৬৯ টাকা পায়। কোদালা চা বাগানে তার ব্যতিক্রম।
কোদালা চা বাগান পল্লীর সাধারন সম্পাদক সুজিত বাড়ৈ জানান, এখানকার এক হাজারের উপরের শ্রমিকের জীবন যাত্রা দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল চা শ্রমিকদের পরিবার। আধুনিক জীবনের সব সুবিধা তারা ভোগ করছে। পল্লীতে মাদক নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করায় মাদক সেবন অনেকাংশে কমে এসেছে।
কোদালা চা বাগানের সিনিয়র সহকারি ব্যবস্থাপক রাশেদ মাহমুদ রুবেল জানান, কোদালা বাগানের চা শ্রমিকদের জীবন আগের চেয়ে অনেক পাল্টে গেছে। তাদের সুযোগ সুবিধা বেড়েছে। বেড়েছে জীবন যাত্রার মানও। আমরা শিশু শ্রম নিরুৎসাহিত করছি। চা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।